click on images to know more about the Images
(শঙ্করের বাড়ির সামনে মহিষ মুগুর ভেজে শরীর চর্চা করছে । এমন সময় গণা আসে )
গণাঃ- এবার বুঝেছি মহিষদা, কেন তোমার শরীর পাথরের মত এত শক্ত ।
মহিষঃ- (থেমে ) শোনো। দাদা নয়, তোমরা আমাকে কাকা বলে ডাকবে।
গণাঃ- কেন ?
মহিষঃ- কেন মানে ? তোমার বাবা আমার দেশওয়ালী দাদা, তাই। এবার বলো- কি বলছিলে ?
গণাঃ- বলছিলাম তোমার মুগুর ভাজা নিয়ে ।
মহিষঃ- শরীর চর্চা তো করতেই হবে। তা না হলে তোমার মতো জল চৌকিতে বসে তালা-তালা মণ্ডা মিঠাই খেলে হজম হবে ?
গণাঃ- আমি শুধু একা খাই ? তুমিও তো মোষের মতো খাও।
মহিষঃ- খেলেও আমি এই মুগুরের সঙ্গে কুস্তি করি। তোমার মতো ভুঁড়িওয়ালা হতে চাই না।
গণাঃ- (চিন্তা) তা ঠিক । আমাদের প্রায় সময় মর্তে যেতে হয়। ওখানকার মানুষদের যেভাবে প্রেসার সুগার হচ্ছে- তার জন্য আমার খুব চিন্তা হয়।
মহিষঃ- তোমাদের আবার চিন্তা কিসের ? তোমরা তো জরা, মৃত্যুহীন কৈলাসে থাকো ।
গণাঃ- থাকলেও বা । আমাদের সারা বছরের খাদ্যটা তো সেই কলকাতা থেকে আসে। ওই কলকাতার ভেজাল খাবার খেয়ে যদি...
(শ্বেতা আসে )
শ্বেতাঃ- তোর যদি এতই ভয়, তাহলে থালা-থালা খাস কেন ?
গণাঃ- কি করবো ! ব্যবসাদরেরা কিছুতেই ছাড়ে না যে !
শ্বেতাঃ- আহা, কি আদুরে কথা ! ছাড়ে না বললেই হলো ?
গণাঃ- বা রে ! ভক্তরা যদি ভালবেসে দেয় তো কি করবো ?
শ্বেতাঃ- ভালোবাসা না ছাই ! ওরা তোর মাথায় কাঁঠাল রেখে কোয়া বের করে খাওয়া মানুষ ।
গণাঃ- কেন ওদের অনর্থক বদনাম দিচ্ছিস ?
শ্বেতাঃ- চালে ডালে ভেজাল মিশিয়ে হরদম কালো টাকার পাহাড় তৈরি করছে, আর তোর মতো ভুঁড়ি বানিয়ে গদিতে বসে আছে । এগুলো অনর্থক ?
মহিষঃ- সত্যি কথা বলতে কি- তোমরা হলে চোরে চোরে মাসতুতো ভাইয়ের মতো । ওই ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের রক্ত চুষতে তোমাদের মণ্ডা মিঠাই খাওয়াচ্ছে । আর তোমরাও সেই ঘুষ খেয়ে নির্লিপ্তের মতো চোখ বন্ধ করে আছো।
শ্বেতাঃ- মহিষ কাকা ঠিকই বলেছে। ঘুষ না খেয়ে তুই যদি ওদের কড়া হাতে দমন করতিস...
গণাঃ- ব্যবসায়ীরা না হয় আমার অধীনে। কিন্তু ঐ সরকারি চাকুরে, মাস্টার, ডাক্তার, উকিল- ওরা কার শিক্ষায় শিক্ষিত ? নিজ কর্তব্যের তোয়াক্কা না করে দু'নম্বরী ব্যবসায় মেতে আছে। এর জন্য কে দায়ী ?
শ্বেতাঃ- (অবাক হয়ে) আশ্চর্য ! এর জন্য তুই আমাকে...
গণাঃ- তোকে ছাড়া কাকে বলবো ? তুই তো ছোটো থেকে ওদের চুরি বিদ্যার হাতে খড়ি দিয়ে পারদর্শী করে আমার কাছে পাঠাচ্ছিস । ওরা মুখে "বিদ্যা দে মা, বিদ্যা দে মা" বলে কাতর হয়ে ডাকে আর অন্তরে অবাধে পরীক্ষার খাতায় টুকলি করে । আর তাতেই তুই সন্তুষ্ট । কাউকে কোনদিন শাসন করিস না । তাহলে চুরির মদত কে দিচ্ছে ?
(গৌরী আসে )
গৌরীঃ- তোদের কি হয়েছে বলতো ? সেই তখন থেকে গজ-গজ করছিস !
শ্বেতাঃ- মা। তুমি বলো- আমি বছরে ক'বার বাংলায় যাই ? তোমার সঙ্গে, আর সেই শ্রী পঞ্চমীতে। এতে কত ঘুষ খেতে পারি ? আর গণা, রমা- এরা সারা বছর ধরে ভারতবর্ষ চুষে খাচ্ছে।
(রমা আসে )
রমাঃ- এই। তুই আমার নামে কি বলছিস রে ?
শ্বেতাঃঃ(- বিরক্ত হয়ে) তোর মুন্ডু আর আমার মাথা ! হুঃ! ( মুখ বেঁকিয়ে চলে যায়)
রমাঃ- কি হলো মা ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারলাম না ।
গৌরীঃ- ফালতু ঝামেলা বুঝে লাভ নেই। যা, সব গোছ-গাছ করে ফেল। কাল ভোরে বেরুতে হবে।
রমাঃ- মা। আমরা কিভাবে যাবো ?
মহিষঃ- তোমার মামাকে বলো না- এ বছর প্লেনে নিয়ে যাক।
রমাঃ- হ্যাঁ ! মহিষ কাকা ঠিক বলেছো ।
গৌরীঃ- অত নাচানাচি করিস না তো ! পুজোতে ওদের কত খরচ ! খাওয়া-দাওয়া, আত্মীয়-স্বজন, জামা-কাপড়। তার উপরে এ চাপটা না দিলে হয়
না ?
রমাঃ- তুমি তোমার ভাইদের কথা ভাবো। ওরা তো প্লেনে, ট্রেনে, জাহাজে কত ঘোরাঘুরি করে । আর তোমার বেলায় সেই হাতি, নৌকা, দোলা ! অন্তত একবার তো প্লেনে চড়াতে পারে !
গৌরীঃ- তুই থামবি ? আলতু ফালতু বায়না করে জ্বালিয়ে মারে !
মহিষঃ- দাঁড়াও। রাগারাগি করো না। আমার মাথায় একটা প্লান এসেছে।
রমা ও গণাঃ- (উৎপন্ন হয়ে) কি প্ল্যান এসেছে- বলো।
মহিষঃ- বিজ্ঞানীরা তো অহরহ মহাকাশে যাতায়াত করছে। ওদের বললে হয়- পুজোর সময় আমাদের একটু প্লেনে তুলে কলকাতা নামিয়ে দিতে।
রমাঃ- (উৎফুল্ল হয়ে) জানো না, এই কথাটা আমি একবার সুনিতা উইলিয়ামকে বলেছিলাম ।
মহিষঃ- তাই ? তা সুনিতা কি বললো ?
রমাঃ- কি আর বলবে ! মেয়ে মানুষ তো। বললো- বাজে কাজে নষ্ট করার মত সময় আমার নেই ।
গৌরীঃ- পুজোর জন্য যাবো- সেটাকে বাজে
ভাবলো ?
মহিষঃ- ভাববে তো । ও এখন ভারতীয় নয়। সাহেব দেশের মানুষ। ওরা এগুলোকে কুসংস্কার ভাবে।
রমাঃ- কুসংস্কার ! এ যদি কুসংস্কার হবে, তাহলে ভারতীয়রা মানে কেন ?
গৌরীঃ- ওরা না মারলে তোদের পেট চলবে কি
করে ?
মহিষঃ- সবই দু'নম্বরী ব্যাপার। এ দেশটা ভুলের ভিতে দাঁড়িয়ে।
গৌরীঃ- মহিষ, তুই থাম না ! কেন পুরানো কাসুন্দি ঘেঁটে মনের কলুষতা বাড়াস ? যে ইতিহাস চাপা পড়ে গেছে, তা আর কেন খোচাচ্ছিস ? এতে কষ্ট ছাড়া কিছুই পাবি না ।
রমাঃ- কি চাপা পড়ে গেছে মা ?
গৌরীঃ- এসব শুনে তোদের কাজ নেই।
রমাঃ- আমার শুনতে ইচ্ছা করছে। তুমি বলো, আমি শুনবো।
গৌরীঃ- (বিরক্ত হয়ে) ওরে বাবা ! সবকিছু শুনতে হবে ? যখন আর্য-প্রাগার্যদের যুদ্ধ হয়, তখন আমি আর্যদের সহযোগিতা করেছিলাম। তাতে প্রাগার্য মানে এই অসুরদের পরাজয় হয় । তাই মহিষ মাঝে মাঝে ক্ষোভ উগরে দেয় ।
মহিষঃ- মানসিক ক্ষতের জ্বালায় যদি মাঝে মাঝে ক্ষোভ উগরে ওঠে তো অন্যায় কি ?
গৌরীঃ- আহা বলছি তো- অন্যায় তোর নয, আমার। তাই তার মাশুল দিতে তোকে আমার সঙ্গে রেখেছি- যাতে আমার মতো তুইও ভারতবাসীর পূজা পাস।
মহিষঃ- পুজো না ছাই ! বরং আর্যদের নির্দেশে প্রায় সব ভারতবাসী আমার বংশধরদের ঘৃণা করে । যদি ওরা আমাকে সত্যিকারের পুজো করতো, তাহলে আমার নামে মন্দির কই ? তোমাদের মতো কেন আমাকে আলাদা করে পূজা করে না ?
রমাঃ- মহিষ কাকা তো ঠিক বলেছে মা । এটা কিন্তু অন্যায় ।
গৌরীঃ- (মহিষের পিঠে হাত দিয়ে) দুঃখ করিস না মহিষ । পুরানো কথা ভুলে যা। আমি যতদিন আছি, ততদিন আমার সঙ্গে তোকেও রাখবো। কাল ভোরে বেরোতে হবে। তোর সাজ পোশাক গুছিয়ে নে। যা। (ঠেলে পাঠিয়ে দেয়। শ্বেতাকে) শোন । সব সময় মহিষের কথায় সায় দিবি না তো !
(কাতু আসে। পিছনে গোবরা )
কাতুঃ- (সুরে) দম মারো দম, বলো সুবে সাম, হরে কৃষ্ণ হরে রাম ।
গৌরীঃ- (আশ্চর্য হয়ে) সে কি ! কাতু ! তুই বাপকা বেটা হয়ে গেছিস ?
কাতুঃ- (হেসে) হুঁ-হুঁ ! ছেলেরা সব কিছুতে বাবার চেয়ে আরো একধাপ উপরে তো ওঠে মা।
গৌরীঃ- হারামজাদা ! তা বলে তুই গাজায় দম
দিবি ? (কাতুকে মারতে যায়)
গোবরাঃ- কি করছিস দিদি? আমাদের কাতু দেবে গাজায় দম !
গৌরীঃ- দিনকাল খারাপ। তার উপর বছর বছর কলকাতায় যেতে হয়। কখন কার পাল্লায় পড়বে...
গোবরাঃ- আমার ভাগ্নে সেরকম ছেলেই নয় । যদি সে রকম হতো, তাহলে তোর চিন্তা থাকতো না।
গৌরীঃ- তোর আক্কেল তো মন্দ নয় ! জামাইবাবুর সঙ্গে তুইও গাজায় দম দিয়ে কথা বলছিস নাকি ? ছেলে গাঁজা টানবে, আর মা চিন্তা মুক্ত হবে !
গোবরাঃ- দেখ, তুই তো চার সন্তানকে চারটে ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছিস। তাই রমা, গণা, আজ দাঁড়িয়ে গেছে। শ্বেতারটাও মোটামুটি হয়েছে। এখন চিন্তা শুধু এই কাতুকে নিয়ে। এর ডিপার্টমেন্টটা ভাল বাছতে পারিস নি।
গৌরীঃ- আমার ভাবনাটা খারাপ ছিল না। হঠাৎ মানুষ জন্মনিয়ন্ত্রণ করে বসবে- এটা কে জানতো ?
কাতুঃ- মামা। গৃহস্থরা আমাকে ভুলে গেছে । যখন পাড়ার বখাটে ছেলেরা মজা করতে কারোর বাড়িতে ঠাকুর ফেলে, তখন দু'চারটা সন্দেশ বাতাস খেতে পাই। ওরা ভীষণ বদ হয়ে গেছে।
রমাঃ- এই ! সব সময় ওদের দেওয়া ছাড় তো ।
কাতুঃ- দেখলে মামা, ওর গায়ে কেমন লাগলো ? (রমাকে) তোর তো চিন্তা নেই। মর্তবাসিরা দুবেলা তোকে ঝোলা ভরে দেয়। আমাকে তো কেউ দেয় না। তাই তোকে দেখলে আমার হিংসা হয়।
রমাঃ- তা তো হবে। ভাই বোনে হিংসা না করলে মানায় ! তোর স্বভাবটা ঠিক নারদ মামার মতো।
গৌরীঃ- তুই চুপ করবি ! দেখছিস- ওর তেমন রোজগার পাতি নেই। তবু...
কাতুঃ- নিজে ভাল রোজগার করে বলে নারানকে বিয়ে করে নিলো। আর আমার পয়সা নেই, তাই সারা জীবন ধেড়ে কার্তিক, মাকাল ফলের বদনাম নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে ।
গোবরাঃ- আহা ! তোর মামা যখন বেঁচে আছে, তখন দেখ না- কি ব্যবস্থা করতে পারি।
গৌরীঃ- দেখ না ভাই- যদি কিছু করতে পারিস। তোর জামাইবাবু সেই রকম ! ছেলে-মেয়ের কথা ভাবেনা । শুধু গাঁজা খায় আর পাহাড়ের ঢালে শুয়ে থাকে । এদিকে আমি ছেলের চিন্তায়...
গোবরাঃ- হু । ওর "দম মারো দম" গান শুনে তুই তো রেগে টং । বুঝলি না- ও কেন গাইছিলো ।
গৌরীঃ- হ্যাঁ ! কেন বলতো ?
গোবরাঃ- ও তো দেখতে সুন্দর । তাই টেস্ট করছিলাম- কণ্ঠস্বরটা কেমন । অনেক চলচ্চিত্র, সিরিয়ালের পরিচালকদের সঙ্গে আমার আলাপ আছে । যদি কোনো...
রমাঃ- (উৎসাহিত হয়ে) ইস ! টিভি সিরিয়াল ! মামা, ও মামা, দেখো না- আমাকে যদি একটু...
গোবরাঃ- তুই আবার এর মধ্যে নাক গলাচ্ছিস
কেন ? কাতুর জন্য একটু চেষ্টা করতে দে না ! (রমা অভিমানে "হুঁ" শব্দ করে মুখ বাঁকায়)
গৌরীঃ- হ্যা রে গোবরা, টিভি সিরিয়ালে ভাল পয়সা আছে, তাই না ?
গোবরাঃ- পয়সা তো নিশ্চয়ই আছে । তবে প্রথম দিকে জোর লড়াই করতে হবে । পায়ের তলায় জমিটা শক্ত করে নিতে পারলেই- ব্যস ! আর পিছন ফিরে তাকাতে হবে না । আমি যখন আছি, তোকে কিছু ভাবতে হবে না ।
গৌরীঃ- তুই কি করবি ?
গোবরাঃ- একে তাকে ধরাধরি করে নিশ্চয়ই টলিউডে একটা জায়গা করতে পারবো। তারপর টলিউড থেকে যখন বলিউডে
যাবে, তখন প্রচুর পয়সা ! ফাটাফাটি ব্যাপার।
কাতুঃ- (আনন্দে ও সুরে) "আমি নায়ক হবো-আমি নায়ক হবো । ( রমা গোমড়া মুখ করে থাকে)
(আলো নিভে আসে)
(ক্রমশঃ প্রকাশ্য)