click on images to know more about the Images
একদিন রাত্রিবেলায় সন্তুবাবু তাঁর প্রিয় মার্সিডিজ গাড়িটিতে চড়ে বাড়ি হতে ষাট কিলোমিটার দূরের একটা জায়গায় বেড়াতে যান।তাঁর সঙ্গে ছিল তাঁর গাড়ির ড্রাইভার রামু।রামু সন্তুবাবুর খুব বিশ্বস্ত ও একজন অনুরাগী বা ভক্ত।সন্তুবাবু কোথাও রাতের দিকে বেড়াতে গেলে ওই মার্সিডিজ গাড়িটি ও রামুকে ছাড়া খুব একটা যান না।রামুও সন্তুবাবুর সঙ্গে এই ভ্রমণ খুব উপভোগ করে থাকে,তাকে যেতে বললে সে এককথায় রাজি হয়ে যায়।
তো সেই রাতটা ছিল শীতের।চারিদিকে কনকনে ঠান্ডা ও বাতাসে একটু কুয়াশার আস্তরণ রয়েছে।মাঝে মাঝে রামু গাড়ি চালাতে চালাতে ব্রেক কষছে যাতে কোনরকম দুর্ঘটনা না ঘটে এই ভেবে।
তো সন্তুবাবু ও রামু গাড়িটি চালিয়ে প্রায় চল্লিশ
কিলোমিটার এগোনোর পর একটি ধাবা দেখে ধাবাটির সামনে গাড়িটি দাঁড় করায়।সেটি ছিল অমাবস্যার রাত,চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।
ধাবাটি ফাঁকা জায়গার মধ্যে অবস্থিত হলেও বেশ বড়সড়,চারপাশটায় ধাবাটি ছাড়া দুই একটা পান-সিগারেটের দোকান চোখে পড়ে মাত্র।আর কিছু নেই সেখানে।
তো ধাবার সামনে সন্তুবাবুর রামুকে গাড়ি দাঁড় করাতে বলার একটিই কারণ,তাঁরা দুজনে সেখানে রাতের ডিনার করবেন আর কি!ধাবাটির মালিকটি বেশ লম্বা-চওড়া,ফর্সা সুপুরুষ,টিকালো নাক ও বড় বড় গোঁফ।ধাবায় বেশ কিছু পুরুষ পরিচারক রয়েছে যারা ভীষণ কর্মঠ ও চটপটে।তাদের ধাবার মালিক নিরঞ্জন সরকার কিছু অর্ডার করলে তা তারা যথাসাধ্য প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি করে পরিবেশন করে থাকে।ধাবায় একটি পরিচারিকা রয়েছে,নাম তার রিম্পি।বয়স আনুমানিক আঠেরো-ঊনিশ মত হবে।সে খুব বাধ্য ও কথাবার্তায়ও ভীষণ নম্র,একটু লাজুকও বটে।বছর দুই হল পাশের গ্রাম রুপনগর থেকে নিরঞ্জনবাবু সে কাজের সন্ধান করায় তাকে ধাবায় রেখেছে।সে ধাবার তরকারি কোটা ও বাসনপত্র ধোয়ার কাজ বেশ মুন্সিয়ানার সঙ্গে করে দিয়ে থাকে।
তো নিরঞ্জনবাবুর রিম্পিকে কিছু বললে রিম্পি খুব বাধ্য মেয়ের মতো তা পালন করে থাকে।তার কাজের ব্যাপারে কোন অনুযোগ বা অভিযোগ সচারাচর থাকে না।সে খুব কোমল স্বভাবের মেয়ে।বাড়ির দরিদ্রতা তাকে এরকম একটি কাজে আসতে বাধ্য করেছে।সে হাসিমুখে তার দায়িত্ব পালন করে থাকে সর্বদা।
কোন ঢিলেমি নিরঞ্জন বাবু তার মধ্যে অবলোকন করেননি।রিম্পি তার সমস্ত কাজ সেরে তার দাদা টুবাইয়ের সঙ্গে রাত্রে বাড়ি ফেরে।টুবাই বোনকে নিতে ওই ধাবায় রাত্রির দিকে প্রতিদিন আসে।
যাইহোক সন্তুবাবু সেদিন ধাবায় প্রবেশ করে ধাবার মালিককে তাঁদের চারটে করে রুটি,দুটো তড়কা ও দু প্লেট কষা মাংসের অর্ডার করেন ও নির্দিষ্ট আহারের জায়গায় বসে থাকেন।সন্তুবাবু একটু কৌতূহলী প্রকৃতির মানুষ ছিলেন এবং তিনি ভীষণ মানবহিতৈষীও ছিলেন।তাঁর পাশের সিটে বসে রামু মোবাইলে কিছু গান টান ইত্যাদি শুনছিল।সন্তুবাবু ঐ অল্প সময়ের মধ্যেই লক্ষ্য করেন যে সেই ধাবার সকল পরিচারক ও একমাত্র পরিচারিকা রিম্পি কি যত্ন সহকারে তাদের অর্ডারগুলি সরবরাহ করার জন্য প্রয়োজনীয় রান্নাবান্না ও বাসন-কোসন এগিয়ে তাতে খাবার পরিবেশন করার কাজগুলি করছে।এগুলো সমস্ত লক্ষ্য করে ধাবায় বসে সন্তুবাবুর ওই ধাবা সম্পর্কে ধারণা খুব উচ্চতারে বাঁধা হয়ে যায়।
সময়মত ওই ধাবার পরিচারকগণ সন্তুবাবু ও রামুকে তাঁদের প্রদত্ত অর্ডারগুলির যথাযথ রন্ধন করে পরিবেশন করেন।রিম্পি তার কাজ সম্পন্ন করে ওই ধাবায় তার স্বীয় জায়গায় চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
সমস্ত রান্নাকরা খাবার জিনিসগুলি খেতে খেতে সন্তুবাবুর ও রামুর সেগুলি খুব সুস্বাদু ও উপাদেয় বলে মনে হয় এবং তাঁরা দুজনে সেই রুটি,ডিম তড়কা ও কষা মাংস খুব তাড়িয়ে তাড়িয়ে খেতে থাকেন। খাওয়া-দাওয়া সম্পন্ন হলে সন্তুবাবু ধাবার মালিককে তাঁদের খাওয়া-দাওয়ার অন্তে যে অর্থ দিতে হবে তা দিতে উদ্যত হন।সমস্ত দেনা-পাওনা মিটে গেলে সন্তুবাবু ও রামু ধাবার এক জায়গায় একটা চৌকি দেখে সেখানে একটু বসে জিরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
সন্তুবাবু হঠাৎ করে লক্ষ্য করেন যে একটি বছর কুড়ি বাইশের ছেলে ধাবায় ঢোকে।সন্তুবাবু তাকে জিজ্ঞেস করেন," তোমার নাম কি গো?" উত্তর আসে, "টুবাই,ওরফে টুবাই হালদার।" "কি কর তুমি?" সন্তুবাবুর পরের প্রশ্ন।এবারে উত্তর আসে," এই গৃহস্থালির কাজকর্ম করি বাবু।"তো তুমি কি কারণে এসেছ এখানে এত রাতে?" ছিল সন্তুবাবুর ঠিক পরের প্রশ্ন।উত্তরা টুবাই বলে,"বোনকে নিতে এসেছি,এত রাতে ও একা বাড়ি যেতে পারবে না তাই।"
সন্তুবাবু এরপরে টুবাইকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করে না। শুধু রিম্পির বদনপানে চেয়ে লক্ষ্য করে সেই শীতের রাতে রিম্পি শুধু একটা ছেঁড়া চুড়িদার পরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ধাবার এককোনে।টুবাই ও রিম্পির কথা ভেবে সন্তুবাবুর চিত্ত বিগলিত হয়।ওই ধাবা ছেড়ে যাওয়ার পূর্বে তিনি টুবাইয়ের হাতে দুটো পাঁচশত টাকার নোট দিয়ে বলেন,"বোনকে একটা ভালো চাদর কিনে দিও।ওর শীতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।" রিম্পি করুণ মুখে একবার তাকায় সন্তুবাবুর দিকে ও টুবাইয়ের হাত ধরে সে ধাবা থেকে দ্রুত বাড়ির উদ্দেশ্যে প্রস্থান করে।
সন্তুবাবু মার্সিডিজ করে ধাবা পরিত্যাগ করে চলে যাওয়ার পরেও ওই ধাবার সমস্ত লোকজনের কথা ভাবতে থাকেন।রিম্পির ও টুবাইয়ের কথা ভেবে কি জানি সন্তুবাবুর মন খারাপ করে!কিন্তু রিম্পির ব্যবহার ও শান্ত স্বভাব তাঁর মনে রেখাপাত করে।তাঁর উক্ত ধাবায় আরেক দিন রামুকে নিয়ে আসার ইচ্ছে হয়।সন্তুবাবু পথে যেতে যেতে মনে এটাই ভাবেন যে,"The women need the clothes most in order to remain protected and here Rimpi needs it badly."